২৬ বলে প্রয়োজন ১৪ রান, হাতে ৯ উইকেট। কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয় যেন সময়ের ব্যাপার। সেই ম্যাচ কী দুর্দান্তভাবেই না জমিয়ে তুলল দিল্লি ক্যাপিটালস। দ্রুত ৬ উইকেট তুলে নিয়ে জাগাল অবিশ্বাস্য এক জয়ের আশা। কিন্তু রাহুল ত্রিপাঠির দারুণ ছক্কায় শেষ পর্যন্ত রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার ম্যাচে জিতল কলকাতা নাইট রাইডার্স। উঠল ফাইনালে। শারজাহতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বুধবার ৩ উইকেটে জেতে কলকাতা। দিল্লির ১৩৫ রান পেরিয়ে যেতে ১৯.৫ ওভার লাগে তাদের। দলের জয়ে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেননি সাকিব। সতীর্থদের যাওয়া আসার মাঝে শেষ ওভারে ক্রিজে এসে ২ বল খেলে ফিরেন শূন্য রানে। এর আগে বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। দিনেশ কার্তিক স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া না করলে অবশ্য তার নামের পাশে থাকতে পারত একটি উইকেট।
টস জিতে বোলিং নেওয়া ওয়েন মর্গ্যান প্রথম ওভারে বল তুলে দেন সাকিবের হাতে। প্রথম বলে রান নিতে পারেননি পৃথ্বী শ। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে খোলেন রানের খাতা। ওভারের বাকি চারটি বল শিখর ধাওয়ানকে ডট খেলান সাকিব। তৃতীয় ওভারে ফিরে সুবিধা করতে পারেননি তিনি। প্রথম বলেই শ এর ব্যাটে হজম করেন ছক্কা, পরের বলে চার। শেষ চার বলে আসে দুটি সিঙ্গেল। সব মিলিয়ে দেন ১২ রান। পাওয়ার প্লের পরপরই অধিনায়ক আক্রমণে আনেন সাকিবকে। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে আসে সিঙ্গেল। পরের বলে ধাওয়ানকে বেরিয়ে আসতে দেখে লেগ স্টাম্পের বাইরে ওয়াইড করেন সাকিব। কিন্তু বল গ্লাভসে জমাতে পারেননি কার্তিক। হাতছাড়া হয় স্টাম্পিং করার সুযোগ। ওয়াইডের সঙ্গে দৌড়ে প্রান্ত বদল করেন দুই ব্যাটসম্যান। পরের বলে মার্কাস স্টয়নিস মারেন চার। শেষ চার বলে আসে চারটি সিঙ্গেল। সব মিলিয়ে ১১ রান দেন সাকিব। ত্রয়োদশ ওভারে আবার বল হাতে পান সাকিব। এবার দেন কেবল চারটি সিঙ্গেল। পঞ্চদশ ওভারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দারুণ একটি ক্যাচ নেন সাকিব। বরুন চক্রবর্তীর ওপর চড়াও হতে আগেভাগেই বেরিয়ে এসেছিলেন ধাওয়ান। লেগে শট খেলার চেষ্টায় পারেননি, ব্যাটের কানায় বল লেগে যায় অফে। সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে বল মুঠোয় জমান সাকিব। বিদায় নেন সর্বোচ্চ ৩৬ রান করা ধাওয়ান।
রান তাড়ায় ৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটিতে কলকাতাকে দারুণ শুরু এনে দেন শুবমান গিল ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার। তিন ছক্কা ও চারটি চারে ভেঙ্কটেশ করেন ৫৫ রান। তার বিদায়ের পর শুবমান ও নিতিশ রানা দলকে রাখেন জয়ের পথে। ষোড়শ ওভারে আনরিক নরকিয়াকে ছক্কা মেরে দলকে জয়ের বেশ কাছে নিয়ে যান শুবমান। ২৬ বলে তখন দলটির প্রয়োজন ছিল কেবল ১৪ রান। ওই ওভারেই নিতিশকে বিদায় করেন নরকিয়া। একটি করে ছক্কা ও চারে ৪৬ বলে ৪৬ রান করা শুবমানকে কট বিহাইন্ড করেন আভেশ খান। বিস্ময়করভাবে শূন্য রানে ফিরেন পরের চার ব্যাটসম্যান কার্তিক, মর্গ্যান, সাকিব ও নারাইন। হারের শঙ্কায় পড়ে যায় কলকাতা। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের করা শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৭ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন ত্রিপাঠি। পরের বলে লেগে খেলার চেষ্টায় পারেননি সাকিব। তৃতীয় বলটি লেগে ঘুরাতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, ব্যাটে খেলতে পারেননি। হয়ে যান এলবিডব্লিউ। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন নারাইন। পঞ্চম বলটি একটু জোরের ওপর করেন অশ্বিন। বোলারের মাথার ওপর দিয়ে সেটি সীমানার বাইরে পাঠান ত্রিপাঠি। জয়ের খুশিতে মাঠ ছাড়ে কলকাতা।
আগামী শুক্রবার ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসের মুখোমুখি হবে কলকাতা। এর আগে একবারই শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দল দুটি। ২০১২ আসরে দুই শিরোপার প্রথমটি জিতেছিল কলকাতা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দিল্লি ক্যাপিটালস: ২০ ওভারে ১৩৫/৫ (শ ১৮, ধাওয়ান ৩৬, স্টয়নিস ১৮, আইয়ার ৩০*, পান্ত ৬, হেটমায়ার ১৭, আকসার ৪*; সাকিব ৪-০-২৮-০, ফার্গুসন ৪-০-২৬-১, নারাইন ৪-০-২৭-০, বরুন ৪-০-২৬-২, মাভি ৪-০-২৭-১)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৯.৫ ওভারে ১৩৬/৭ (শুবমান ৪৬, ভেঙ্কটেশ ৫৫, নিতিশ ১৩, রাহুল ১২*, কার্তিক ০, মর্গ্যান ০, সাকিব ০, নারাইন ০, ফার্গুসন ০*; নরকিয়া ৪-০-৩১-২, অশ্বিন ৩.৫-০-২৭-২, আভেশ ৪-০-২২-১, আকসার ৪-০-৩২-০, রাবাদা ৪-০-২৩-২)
ফল: কলকাতা নাইট রাইডার্স ৩ উইকেটে জয়ী
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।